উৎসব এই মুহূর্তে

১৭৮ বছরে পড়লো সামন্ত পরিবারের কালিপুজো কেতুগ্রামে

বর্ধমান-নিজস্ব প্রতিনিধি- কেতুগ্রামে সামন্ত বাড়ির পুজো ভিন্ন মাত্রা এনেছে,১৭৮ বছরে পদার্পণ করলো এবারের পুজো। জানা গেছে, ১৭৮ বছর আগে স্বপ্নাদেশ পেয়ে একটি দিঘির জলের তলা থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল পাথরের কালীমূর্তি। আর ওইবছর দেবীমূর্তির সাথেই উদ্ধার হয়েছিল একটি সশীষ ডাব। দেবীর স্বপ্নাদেশে প্রথম বছরেই পুজোর শেষে পাথরের কালীমূর্তিটি ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছিল ভাগীরথীর জলে। কিন্তু রয়ে যায় ডাবটি। পূর্ব বর্ধমান জেলার কেতুগ্রামের অনন্তপুর গ্রামের সামন্ত পরিবারের কালীমন্দিরে এখনও দেবীমূর্তির সাথেই ১৭৮ বছর আগে উদ্ধার হওয়া ডাবটি রেখে পুজো করা হয়। স্থানীয়দের বিশ্বাস দৈব নির্দেশে প্রাপ্ত ওই ডাব আজও’জীবন্ত। সেটি দর্শনে দেবীর আশীর্বাদ মেলে। দেবীমূর্তির সামনেই সেই ডাবটি রেখেই সামন্ত পরিবারের পুজো হয়। কেতুগ্রামের ঝামটপুর এবং অনন্তপুর পাশাপাশি গ্রাম। অনন্তপুর গ্রামের সামন্ত পরিবার এলাকায় সম্ভ্রান্ত পরিবার হিসাবে পরিচিত। এই পরিবারের সদস্য বিচারপতি রবীন্দ্রনাথ সামন্ত। যিনি বর্তমানে ওয়েস্ট বেঙ্গল রিয়েল এস্টেট আপিলেট ট্রাইবুনাল এর চেয়ারপার্সন পদে রয়েছেন। এর আগে তিনি কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি ছিলেন। স্থানীয়রা জানাচ্ছেন -‘ ঝামটপুর গ্রামে এক সাধিকা ছিলেন আন্নাকালীদেবী। তিনি শক্তির সাধনা করতেন’। আন্নাকালীদেবীর মা স্বপ্নাদেশ পেয়েছিলেন তাঁদের বাড়ির কাছে জয়ধারা দিঘির জলের তলায় দেবী অবস্থান করছেন। দেবীর স্বপ্নাদেশ হয় ওই দিঘির অগ্নিকোনে জলের তলা থেকে দেবীর মূর্তি উদ্ধার করে পুজো শুরু করার। গ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যে সেই স্বপ্নাদেশের কথা প্রচার হয়ে যায়। এরপর দিনক্ষণ নির্ধারণ করে শুরু হয় দেবীমূর্তি উদ্ধারের প্রক্রিয়া। ঢাক কাঁসর বাজিয়ে দিঘির পাড়ে হাজির হন গ্রামের লোকজন। আন্নাকালীদেবীর মা দিঘির জলে নামেন। তখনও গ্রামের একাংশ ততটা বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। অল্প কিছুক্ষণ পরেই দেখা যায় সাধিকামাতা একটি পাথরের কালীমূর্তি কোলে নিয়ে জল থেকে উঠে এলেন। গ্রামবাসীরা দেখেন তাঁর এক হাত বুকে জড়িয়ে ধরা রয়েছে কালীমূর্তিটি। আর অন্যহাতে ধরা একটি সশীষ ডাব। আন্নাকালীদেবীর দিদি মৃগনয়না দেবীর বিয়ে হয়েছিল ঝামটপুর লাগোয়া অনন্তপুর গ্রামের শংকর সামন্তের সঙ্গে। শংকরবাবুর ছেলে ছিলেন সুধাকর সামন্ত। আন্নাকালীদেবীর নির্দেশেই তাঁর দিদির ছেলে সুধাকর সামন্তকে পরবর্তীতে এই পুজোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। সুধাকরবাবু নিষ্ঠার সঙ্গে তা পালন করে আসেন। অনন্তপুরে তৈরি করা হয় দেবীর মন্দির। সেই মন্দিরেই দেবী পূজিতা হয়ে আসছেন।
রবীন্দ্রনাথবাবু জানান ” আমাদের পুজোয় বলিদান নেই। প্রতিমা নিরঞ্জনের পরের দিনেই সেই কাঠামো তুলে নিয়ে আসা হয় মন্দিরে। ওই কাঠামো বেদিকে রেখেই সারাবছর নিত্যসেবা হয়। আবার পরের বছর ওই কাঠামোতেই দেবীর প্রতিমা নির্মাণ করতে হয়। আর সেই ডাবটিকে কাঁচ লাগানো বাস্কে ডাবটিকে সযত্নে সংরক্ষিত করা আছে। মূর্তির সাথেই সেটি পুজো করা হয়।” দূরদুরান্তের গ্রাম থেকেও দেবীর পুজো দিতে আসেন পুন্যার্থীরা। এই কালীপুজোর পরিবার ভোজের আয়োজন করেন। আপামর গ্রামবাসী অংশগ্রহণ করেন। সামন্ত পরিবারের আমন্ত্রণে রাজ্য পুলিশ প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্তারা থেকে জেলা আদালতের বিচারকদের অনেকেই এই পুজোয় সামিল হতে আসেন বলে জানা গেছে ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *